بسم الله الرحمن الرحيم. الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد المرسلين وعلى آله وصحبه أجمعين, أما بعد!
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা‘য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম এবং সালেহীন তথা সৎকর্মপরায়নগণের প্রতি যাঁরা হলেন হেদায়তের পূর্ণশিখা।
হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমের প্রতি মুহব্বত রাখা, তাঁদের প্রতি সুধারণা পোষণ করা হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ। তাঁদের ইত্তেবা বা অনুসরণ করা –ওয়াজিব। আর তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, তাঁদেরকে কষ্ট দেয়া, সমালোচনা করা, নাকিছ বা অপূর্ণ বলা সম্পূর্ণ গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা। এটাই আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা বা বিশ্বাস। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণ করা বৃহত্তর মুসলিম ঐক্যের বিপরীতে অবস্থান গ্রহনের নামান্তর।
তাঁদের যাবতীয় অপ্রকাশ্য বিষয় সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত আল্লাহ কর্তৃক ন্যায়নিষ্ঠতার ঘোষণার পর আর কোনো সৃষ্টি কর্তৃক তাঁদেরকে ন্যায়নিষ্ঠ ঘোষণার প্রয়োজন নেই। আর তাঁদের মর্যাদা এমনই প্রশ্নাতীত যে তাঁদের মর্তবা সম্পর্কে যদি আয়াতগুলো নাযিল না করতেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোল্লিখিত হাদীসগুলো উচ্চারণ না করতেন, তথাপি তাঁদের হিজরত, জিহাদ, নুছরত, পদ ও প্রতিপত্তি ত্যাগ, পিতা ও পুত্রের বিরুদ্ধে লড়াই, দ্বীনের জন্য অবর্ণনীয় কল্যাণকামিতা এবং ঈমান ও ইয়াকিনের দৃঢ়তা তাঁদের ন্যায়নিষ্ঠতা থেকে বিচ্যুত হওয়া ঠেকাত, তাঁদের পবিত্রতা ও মহানুভবতার পক্ষে সাক্ষী হত। মোদ্দাকথা তাঁরা তো সকল সত্যায়নকারী ও সাফাইকারীর চেয়েই শ্রেষ্ঠ যারা তাঁদের পর এসেছে। এটাই উল্লেখযোগ্য আলেম এবং ফিকহবিদের মত।
আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর একটি উক্তি এখানে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন,
عبد الله بن مسعود رضي الله عنه : ” مَن كانَ مُسْتَنًّا ، فَلْيَسْتَنَّ
بمن قد ماتَ ، فإنَّ الحيَّ لا تُؤمَنُ عليه الفِتْنَةُ ، أولئك أصحابُ
محمد – صلى الله عليه وسلم – ، كانوا أفضلَ هذه الأمة : أبرَّها قلوبًا ،
وأعمقَها علمًا ، وأقلَّها تكلُّفًا ، اختارهم الله لصحبة نبيِّه ، ولإقامة
دِينه ، فاعرِفوا لهم فضلَهم ، واتبعُوهم على أثرهم ، وتمسَّكوا بما
استَطَعْتُم من أخلاقِهم وسيَرِهم ، فإنهم كانوا على الهُدَى المستقيم ” .
“তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অনুসরণ করতে চায় তবে সে যেন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছাহাবীগণেরই অনুসরণ করে। কারণ, তাঁরাই ছিলেন এ উম্মতের মধ্যে আত্মার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি নেককার, ইলমের দিক থেকে গভীরতর, লৌকিকতার দিক থেকে সল্পতম, আদর্শের দিক থেকে সঠিকতম, অবস্থার দিক থেকে শুদ্ধতম। তাঁরা এমন সম্প্রদায় আল্লাহ যাদেরকে আপন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংস্পর্শধন্য হবার জন্য এবং তাঁর দ্বীন কায়েমের উদ্দেশ্যে বাছাই করে নিয়েছেন। অতএব তোমরা তাঁদের মর্যাদা অনুধাবন করো এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করো। কারণ, তাঁরা ছিলেন সীরাতে মুস্তাকীমের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
‘তাঁরা ইলম, ইজতিহাদ, তাকওয়া ও জ্ঞান–বুদ্ধিতে আমাদের ওপরে। তাঁরা আমাদের চেয়ে উত্তম এমন বিষয়ে যে ব্যাপারে ইলম জানা গেছে কিংবা যা ইস্তিমবাত বা উদ্ভাবন করা হয়েছে। তাঁদের রায়গুলো আমাদের কাছে প্রশংসনীয়। আমাদের নিজেদের ব্যাপারেই আমাদের সিদ্ধান্তের চেয়ে তাঁরাই অগ্রাধিকার পাবার হকদার।
আর এসকল ফযীলতের কারনে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম সম্পর্কে বিখ্যাত ফক্বীহ ছাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের সমালোচনা করা, বিদ্বেষ করা কুফরী: আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন: إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِينًا “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক ও তার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের প্রতি আল্লাহ পাকের অভিসম্পাত এবং তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” [ সূরা আহযাব ৫৭ ]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:
حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِيْ إِيَاسٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ الأَعْمَشِ
قَالَ سَمِعْتُ ذَكْوَانَ يُحَدِّثُ عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ
قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: لَا تَسُبُّوْا أَصْحَابِيْ
فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ
أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيْفَهُ.
“তোমরা আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমকে গালি দিও না। কেননা যদি
তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমান স্বর্ণ আল্লাহ পাকের রাস্তায় দান করে, তবুও
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের এক মুদ (১৪ ছটাক) বা অর্ধ মদ (৭
ছটাক) সমপরিমান গম দান করার ফযীলতের সমপরিমান ফযীলতও অর্জন করতে পারবে না।”
সমগ্র দুনিয়ার সকল মানুষের নেক আমল এক করলেও ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুদের কয়েক মুহূর্তের আমলের সমান হবে না। আবদুল্লাহ ইবন
উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন , لا تَسُبُّوا أَصْحَابَ مُحَمَّدٍ
فَلَمَقَامُ أَحَدِهِمْ سَاعَةً خَيْرٌ مِنْ عَمَلِ أَحَدِكُمْ عُمْرَهُ
‘তোমরা হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছাহাবীদের
গালাগাল করো না। কেননা তাঁদের এক মুহূর্তের (ইবাদতের) মর্যাদা তোমাদের
প্রত্যেকের জীবনের আমলের চেয়ে শ্রেষ্ট।’
এ ব্যাপারে ইবন হাযম রাহিমাহুল্লাহর একটি মূল্যবান বাক্য রয়েছে, তিনি
বলেন, ‘আমাদের কাউকে যদি যুগ-যুগান্তর ব্যাপ্ত সুদীর্ঘ হায়াত প্রদান করা হয়
আর সে তাতে অব্যাহতভাবে ইবাদত করে যায়, তবুও তা ওই ব্যক্তির সমকক্ষ হতে
পারবে না যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক সেকেন্ড বা
তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য দেখেছেন।’
ইবন মুগাফফাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ الْمُزَنِيِّ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” اللَّهَ اللَّهَ فِي
أَصْحَابِي ، اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي ، لَا تَتَّخِذُوهُمْ غَرَضًا
بَعْدِي ، فَمَنْ أَحَبَّهُمْ فَبِحُبِّي أَحَبَّهُمْ ، وَمَنْ
أَبْغَضَهُمْ ، فَبِبُغْضِي أَبْغَضَهُمْ ، وَمَنْ آذَاهُمْ فَقَدْ آذَانِي
، وَمَنْ آذَانِي فَقَدْ آذَى اللَّهَ ، وَمَنْ آذَى اللَّهَ فَيُوشِكُ
أَنْ يَأْخُذَهُ ”
‘আমার ছাহাবীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আল্লাহকে ভয় কর। আমার
পরবর্তীকালে তোমরা তাঁদের সমালোচনার নিশানায় পরিণত করো না। কারণ, যে তাদের
ভালোবাসবে সে আমার মুহাব্বতেই তাদের ভালোবাসবে। আর যে তাঁদের অপছন্দ করবে
সে আমাকে অপছন্দ করার ফলেই তাঁদের অপছন্দ করবে। আর যে তাঁদের কষ্ট দেবে সে
আমাকেই কষ্ট দেবে। আর যে আমাকে কষ্ট দেবে সে যেন আল্লাহকেই কষ্ট দিল। আর যে
আল্লাহকে কষ্ট দেবে অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন।’
সূতরাং উক্ত দলীল থেকে বোঝা গেল, যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের প্রতি বিন্দু মাত্র সমালোচনা করবে, উনাদের বিরুদ্ধে স্বজন প্রীতির অপবাদ দিবে, তারা নিশ্চিত কাফির হয়ে জাহান্নামে যাবে। আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন: لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ “একমাত্র কাফিররাই তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে। (সূরা ফাতাহ ২৯ )
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে বর্নিত আছে:
قال الإمامُ مالك ـ رحمه الله ـ: ্রمن أصبحَ في قلبِه غَيْظٌ عَلى أحَدٍ
مِن أصْحَابِ رَسُولِ الله – صلى الله عليه وسلم – فقد أصَابَتْه الآية
ইমাম মালেক বলেন, যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের
প্রতি বিদ্বেষ পোষন করবে, সে এ আয়াতের হুকুমের আওতায় পড়বে।”
This page has 440 hits