প্রিয় নবী (সাঃ) এর শারীরিক গঠন
মাওলানা মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম আশরাফী
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাকের জাতি নূরের জ্যোতি থেকে সৃষ্টি হয়ে মানব রুপে দুনিয়ায় এসেছেন। তাই নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শারীরিক গঠনও বাহ্যিক ভাবে আমাদের মতো। আমাদের যেমন হাত, পা, নাক, চোখ, কান, মাথা, শরীর রয়েছে নবীজিরও তেমন হাত, পা, নাক, চোখ, কান, মাথা শরীর রয়েছে। বাহ্যিক ভাবে নবীজি দেখতে আমাদের মতো হলেও নবীজির শারীরিক গঠনের মধ্যে এমন সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দুনিয়ার অন্য কোন মানুষের নেই। নিম্নে তার কিছু দৃষ্টান্ত পেশ করা হলো-
নবীজির নূরানী চেহারা মুবারকঃ
নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নূরানী চেহারা মুবারকের সৌন্দর্য এমন ছিল যে তার বর্ণনা গিয়ে কেউ বলেছেন আলোকউজ্জল সূর্যের ন্যায় আবার কেউ বলেছেন পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায়। হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এসেছে, “তিনি বলেন- রাসুলুল্লার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেয়ে সুন্দর কোন কিছুই আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি।” এখানে দেখা যাচ্ছে যে, হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু শুধু মানুষের সাথে তুলনা দেননি, তিনি বলেছেন ‘কোন কিছুই আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি’। অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্টি জগতের কোন কিছুই নবীজির চেয়ে সুন্দর নয়। ইমাম বায়হাকী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবু ইসহাক থেকে বর্ণনা করেছেন, “একদা এক হামাদানী মহিলা আমাকে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে হজ¦ করেছি। তা শুনে আমি তাকে বললাম তাহলে তাঁর চেহারা মুবারকের বর্ণনা দাও দেখি। তখন মহিলাটি বললেন, তাঁর চেহারা মুবারক পূর্ণিমার শশীর ন্যায় সুন্দর। আমি এরুপ সৌন্দর্য পূর্বেও দেখিনি। পরেও দেখিনি।”
মাওয়াহেবুল লাদুনিয়া কিতাবে আছে, “হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আনন্দিত হতেন, তখন তাঁর চেহারা মুবারক আয়না সদৃশ হয়ে যেতো। এমনকি দেয়ালের দরজার নকশা এবং অন্য মানুষের চেহারার প্রতিবিম্ব তাতে ঝলমল করতে থাকতো।”
নবীজির পবিত্র মুখমন্ডল মুবারকঃ
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখ মুবারক সম্পর্কে হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে সহীহ মুসলিম শরীফে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশস্ত মুখগহবরের অধিকারী ছিলেন। নবীজির সামনের দাঁত উজ্জ্বল, সাদা ও প্রশস্ত ছিল। হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এসেছে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঠোট মোবারক প্রশস্ত ছিল। যখন তিনি কথা বলতেন তখন মনে হতো যেনো ঠোট মোবারকের ফাঁক দিয়ে সামনের দাঁত থেকে নূরের ঝিলিক রেরুচ্ছে। আল্লামা শরফুদ্দিন বুসীরি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কতইনা সুন্দর করে বলেছেন-
كَاَنَّمَا اللُّؤْ لُؤُ الْمَكْنُوْنِ فِي صَدَفٍ
مِنْ مَعْدِنيِ مُنْطَقٍ مِنْهُ وَمُبْتَسَمِ
অর্থাৎ- “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাঁত মুবারক কথা বলার সময় ও মুচকি হাসির সময় দেখলে মনে হতো ঝিনুক পাটি থেকে বেরিয়ে আসা পরিচ্ছন্ন মুক্তা দানা।”
নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নূরানী হাসি এত সুন্দর ছিল যার তুলনা কোথায় পাওয়া যাবে না। ইমাম বায়হাকী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, “রসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হাসতেন তখন পার্শ্ববর্তী দেয়াল আলোকিত হয়ে যেতো এবং তাঁর পবিত্র দাঁতের নূরে দেয়ালে সূর্যরশ্মির ন্যায় ঝিলিক মারতো।”
নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো হাই তুলতেন না। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে এই কাজটি থেকে সুরক্ষিত রেখেছিলেন। হাই তোলা দৈহিক অবসন্নতার বহিঃপ্রকাশ এবং হাই শয়তানের তরফ থেকে হয়ে থাকে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব দিক থেকেই ছিলেন ব্যতিক্রম। ইয়া রাসুলাল্লাহ আপনার শান কত মহান।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র মুখনিসৃত ধ্বনি ছিল অত্যন্ত সুন্দর ও চিত্তাকর্ষক। তাঁর চেয়ে সুন্দর আওয়াজ ও মিষ্টি কথার কোন মানুষ পৃথিবীতে আসেনি। নবীজির উচ্চারণ ছিল স্পষ্ট। নবীজির আওয়াজে এমন অলৌকিকতা ছিলো যে লক্ষাধিক মানুষের সমাগমে তাঁর কথা গুলো দূরের ও কাছের সবাই আপন আপন অবস্থানে থেকেই স্পষ্ট শুনতে পেতো।
হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখের লালা রোগীদের জন্য পূর্ণ শেফা ছিল। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে- “খয়বরের যুদ্ধের দিন হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর চোখে যন্ত্রণা হচ্ছিল, তখন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় মুখের লালা মুবারক তাঁর চোখে লাগিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সুস্থ হয়ে গেলেন। আরেক ঘটনায় দেখা যায়- একদা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একটি পানির মশক আনা হলো। তিনি সেখান থেকে এক আজলা পানি নিয়ে কুলি করে উক্ত মশকের মধ্যে ফেলে দিলেন। এর পর উক্ত মশকের পানি যখন কূপে ফেলা হলো, তখন পানি থেকে কস্তুরীর সুঘ্রাণ ছড়াতে লাগলো।” সুবহানাল্লাহ! কতইনা পবিত্র ও বরকতময় আমাদের প্রিয় নবীর লালা মুবারক।
নবীজির দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তিঃ
হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৃষ্টিশক্তি এতো প্রখর ছিলো যে, সুরাইয়া নক্ষত্ররাজীর অভ্যন্তরে এগারটি নক্ষত্র তিনি পরিস্কার দেখতে পেতেন। নবীজির নজর মুবারক সামনে পেছনে সমানভাবে কার্যকর ছিলো। হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনের বেলায় যে রকম দেখতে পেতেন ঠিক তেমনি দেখতে পেতেন রাতের অন্ধকারে। (বুখারী শরীফ, বায়হাকী শরীফ, কিতাবুশ শিফা)
বিভিন্ন সহীহ হাদীসে বর্ণনা এসেছে যে, “তিনি অনেক সময় মুকতাদীগণকে লক্ষ করে বলতেন, তোমরা রুকু সেজদায় আমার চেয়ে অগ্রগামী হয়ো না। আমি তোমাদেরকে সম্মুখ পশ্চাৎ উভয় দিক দিয়েই দেখতে পাই, কাজেই তোমাদের রুকু সেজদা আমার কাছে গোপন নয়।” কেউ কেউ এরকম বলেন যে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুই স্কন্ধের মধ্যে সূচাগ্রের ন্যায় সুক্ষ্ম দুটি চোখ ছিলো যার মাধ্যমে তিনি পেছনেও দেখতে পেতেন।
নবীপাকের দৃষ্টিশক্তির মতো শ্রবণশক্তিও ছিলো অত্যন্ত প্রখর যা আল্লাহ পাক শুধুমাত্র তাঁর প্রিয় হাবীবকেই দান করেছেন। এক হাদীসে বর্ণনা এসেছে, নবীজি বলেন- “আমি ঐ সমস্ত জিনিস দেখতে পাই, যা তোমরা দেখতে পাওনা। আর আমি ঐ সমস্ত জিনিস শুনতে পাই যা তোমরা পাওনা। আমি আকাশের আতইয়াতও (উর্ধজগতের এক বিশেষ প্রকারের ধ্বনি) শুনতে পাচ্ছি। সুবহানাল্লাহিল আযিম। আমাদের মধ্যে কে আছে এমন যে আমরা নবীজিকে আমাদের মতো সাধারণ বলি।
মহরে নবুওয়াতঃ
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্কন্ধদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে মহরে নবুওয়াত ছিলো যা নির্দেশ করে যে তিনি নবুওয়াতের ধারা সমাপ্তকারী ছিলেন। মহরে নবুওয়াত ছিলো সামান্য উঁচু মাংসবিশেষ, যা শরীরের বর্ণের মতোই ছিলো স্বচ্ছ ও নূরানী। হযরত শায়খ ইবনে হাজার মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি শরহে মিশকাতে বলেছেন- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহরে নবুওয়াতের মধ্যে লিপিবদ্ধ ছিলো-
اَللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ
تَوَجَّهُ حَيْثُ كُنْتَ فَاِنَّكَ مَنْصُوْرٌ
অর্থাৎ- “আল্লাহ অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শরীক নেই, আপনি যে ভাবেই থাকুন কা কেনো হাওয়াজ্জুহ করুন। আপনি অবশ্যই বিজয়ী।”
নবীজির হাত মুবারকঃ
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র হাত মুবারক ছিল নরম ও মোলায়েম। তিবরানী মুস্তাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, “তিনি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাত মুবারক সম্পর্কে তার পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আমি একদা রাসুলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট উপস্থিত হই এবং তাঁর সাথে মুসাফাহা করি। আমার মনে হলো হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাত মুবারক রেশমের চেয়ে নরম এবং বরফের চেয়ে ঠান্ডা।”
বায়হাকী ও তিবরানী শরীফে হযরত ওয়ায়েল ইবন হাজর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করা হয়েছে- “আমি যখনই হুজুর পাকের সাথে মুসাফাহা করতাম তখন তাঁর হাত মুবারক স্পর্শ করার কারণে আমার হাত এতো সুরভিত হয়ে যেতো যে, সমস্ত দিনভর আমার হাতে থেকে ঘ্রাণ নিতে থাকতাম। হাত থেকে মেশক আম্বরের চেয়ে অধিক ঘ্রাণ বের হতো।”
হযরত সাআদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “একদা আমার অসুস্থতায় হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দেখতে এলেন। তিনি স্বীয় হাতখানা আমার কপালের উপর রাখলেন। এরপর আমার চেহারা, বুক ও পেটের উপর স্বীয় পবিত্র হাত মুবারক বুলিয়ে দিলেন। এতে আমার অনুভব হলো, এখন পর্যন্ত তাঁর হাতের শীতলতা আমার কলিজা পর্যন্ত বিরাজ করছে।”
ছায়াবিহীন দেহ মুবারকঃ
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেহ মুবারকের কোন ছায়া ছিলো না। সূর্যের আলোতেও না চাঁদের কিরণেও না। নবীজির দেহ মুবারকের ছায়া না থাকা প্রমাণ করে যে তিনি নূরের তৈরি। কেননা নূরের কোন ছায়া হয় না।
যুরকানী শরীফে উল্লেখ আছে-
لَمْ يَكُنْ لَّهُ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ظِلٌّ فِي شَمْسٍ وَّلَا قَمَرٍ لِاَنَّه كَانَ نُوْرًا
অর্থাৎ- “সূর্য চন্দ্রের আলোতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেহ মোবারকের ছায়া পড়তো না। কেননা, তিনি ছিলেন আপাদমস্তক নূর।”
নবীজির দেহ মুবারকের বর্ণ ছিলো উজ্জ্বল ও দ্যুতিময়। আবু তালেব নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রশংসায় বলেন- “তাঁর চেহারা মুবারকের শুভ্রতার কাছে বর্ষণকারী শুভ্র মেঘমালাও ভিক্ষা তালাশ করে।”
নবীজির পবিত্র দেহ মুবারক থেকে এমন সুঘ্রাণ বের হতো যে পৃথিবীর কোন সুগন্ধি তার সমতুল্য হতে পারতো না। হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “যতো প্রকারের সৌরভ আছে চাই তা মেশক হোক বা আম্বর, আমি তার ঘ্রাণ গ্রহণ করেছি। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্রতম দেহের সৌরভের সমতুল্য কিছুই হতে পারে না।”
পবিত্র ঘাম মুবারকঃ
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র ঘাম মুবারক থেকে মেশক আম্বরের চেয়েও বেশি সুঘ্রান বের হতো। ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার শান কত মহান। কে আছে আল্লাহ পাকের সৃষ্টিজগতে আমাদের প্রিয় নবীর মতো।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- “এক ব্যক্তি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে আরজ করলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার নিজ কন্যা বিবাহ দিতে হবে। অথচ আমার কাছে কোন সুগন্ধি নেই। আপনি কিছু সুগন্ধি দান করুন। তিনি ফরমালেন- আগামীকাল খোলা মুখ বিশিষ্ট একটি শিশি নিয়ে আসবে। পরের দিন লোকটি একটি শিশি নিয়ে এলো। হুজুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উভয় বাহু থেকে শিশিতে ঘাম ঢালতে লাগলেন। এমনকি তা ভরে যায়। অতঃপর ইরশাদ করলেন, এটা নিয়ে যাও। আর তোমার কন্যাকে বলবে যেনো এ থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করে।”
فَكَانَتْ اِذَا تُطِيْبَتْ بِهِ شم اَهْلُ الَمدِيًنة رَائحَةً ذَلِكَ الَطيِّب فَسَمُّوْا بَيْتُ الْمُطَيِّبِيْنَ
অর্থাৎ- “যখন উক্ত মহিলা নবীজির ঘাম মুবারক সুগন্ধি হিসাবে ব্যবহার করতো, তখন সমস্ত মদিনা বাসীর কাছে তার সুগন্ধি পৌছে যেতো। এমনকি তারা ঐ ঘরকে ‘বায়তুল মুতায়্যেবীন’ বা সুবাসিতদের ঘর নামে আখ্যায়িত করলো।” (তাবরানী, খাসায়েসে কুবরা)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, “মেরাজের ভ্রমণ শেষে আমি যখন পৃথিবীতে পদার্পণ করি, তখন আমার ঘামের একটি ফোঁটা মাটিতে পড়ে গোলাপের সৃষ্টি হয়। কেউ যদি আমার দেহের ঘ্রাণ গ্রহণ করতে চায়, তবে সে যেনো গোলাপের ঘ্রাণ গ্রহণ করে।”
নবীজির পবিত্র পস্রাব, পায়খানা ও রক্ত মুবারকঃ
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পস্রাব, পায়খানা ও রক্ত মুবারক পাক পবিত্র ছিল আর এটা এমন এক বৈশিষ্ট্য যা শুধু নবীজিকেই দান করা হয়েছে।
আল্লামা কাসতুলানী (রঃ) তদীয় ‘মাওয়াহেবুল লাদুনিয়া’ তে একখানা হাদীস উল্লেখ করেন-
عَنْ اُمِّ اَيْمَنْ قَالَتْ قَامَ رَسُوْلُ الله صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ مِنَ اللَّيْلِ اِلَي فَخَّارَةِ فِي جَانِبِ الْبَيْتِ فَبَالَ فِيْهَا فَقُمْتُ مِنَ اللَّيْلِ وَاَنَا عَطْشَانَةُ فَشَرِبْتُ مَا فِيْهَا وَاَنَا لَا اَشْعُرُ فَلَمَّا اَصْبَحَ النَّبِيِّ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ قَالَ يَا اُمِّ اَيْمَنْ قَوْمِي فَاَهْرِيْقِيْ مَا فِي تِلْكَ الْفَخَّارَةِ فَقُلْتُ قَدْ وَاللهِ شَرِبْتُ مَا فِيْهَا قَالَتْ فَضَحِكَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ حَتَّي بَدَتْ ثُمَّ قَالَ اَمَا وَاللهِ لَا يُصِيْبُ بَطْنُكِ اَبَدًا
অর্থাৎ- “হযরত উম্মে আয়মান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক রাত্রিতে ঘুম থেকে উঠে ঘরের পার্শে একটি মাটির পাত্রে প্রস্রাব মুবারক করলেন। আমি রাত্রে ঘুম থেকে উঠে খুব তৃষ্ণার্তবোধ করলাম। অতৎপর মাটির পাত্রে যা ছিল তা পান করে নিলাম। পাত্রে কী ছিল তা আমি মোটেই অবগত নই। তারপর সকালে নবী করি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে সম্বোধন করে বললেন হে উম্মে আয়মান! ঘুম থেকে উঠো আর মাটির পাত্রে যা আছে তা ফেলে দাও। অতঃপর আমি বললাম নিশ্চয় আল্লাহর কসম মাটির পাত্রে যা কিছু ছিল তা আমি পান করে ফেলেছি। তিনি বললেন (উম্মে আয়মান) তৎক্ষনাৎ আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেসে দিলেন এমনকি তাঁর প্রান্তসীমার দাঁত মুবারক প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর আল্লাহর হাবীব বললেন- আল্লাহর কসম তোমার পেটে কখনও পীড়া হবে না।”
কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, “এক ব্যক্তি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেশাব মুবারক পান করেছিলেন। এর ফলে তার সমস্ত শরীর থেকে সারা জীবন সুঘ্রাণ ছড়াতে থাকতো। এমন কি তার বংশধরদের ভিতরেও কয়েক পুরুষ পর্যন্ত উক্ত সুঘ্রাণ পাওয়া যেতো।” (মাদারেজুন নবুওয়াত)
আল্লামা কাজী আয়াত (রঃ) তদীয় শিফা শরীফে উল্লেখ করেন-
“অনেক বিজ্ঞ হাদীস বিশারদ উলামায়ে কেরাম, রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস শরীফ ও শামাঈল শরীফ বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর হাবীবের শান ছিল এই, যখন তিনি পায়খানা মুবারক করার ইচ্ছা করতেন, তখন মাটি বিদীর্ণ হয়ে যেতো এবং পায়খানা মুবারক ও প্রস্রাব মুবারক গিলে ফেলতো এবং সে স্থান উৎকৃষ্ট ও পবিত্র সুঘ্রাণে মুখরিত হয়ে যেতো।”
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রক্ত মুবারক ছিলো পবিত্র ও বরকতময়। সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক নবীজির রক্ত মুবারক পান করার একাধিক ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়। যে ব্যক্তি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেহে সিঙ্গা লাগাতেন তিনি সিঙ্গা দিয়ে টানা রক্ত মুবারক বের করে এনে অবলীলাক্রমে তা গলধঃকরণ করে নিতেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি রক্ত কি করেছো? লোকটি বললেন, আমি রক্ত বের করে আমার পেটের মধ্যেই রেখে দিয়েছি। আমি এটা কামনা করি না যে হুজুরের দেহ মুবারকের রক্ত মাটিতে পড়ুক। একথা শুনে নবীজি বললেন, নিঃসন্দেহে তুমি আপন আশ্রয় খুঁজে নিয়েছো এবং নিজেকে সুরক্ষিত করে নিয়েছো। অর্থাৎ এ উসিলায় তুমি রোগ ব্যাধি থেকে নিরাপদ হয়ে গেলে।
উহুদের যুদ্ধের দিন হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আহত হয়ে গেলেন, তখন হযরত আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর পিতা হযরত মালেক ইবনে সিনান রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের জিহবা দিয়ে হুজুরের যখম থেকে রক্ত চুষে চেটে যখমকে পরিস্কার করে দিয়েছিলেন। লোকেরা বললো, মুখ থেকে রক্ত বাইরে ফেলে দাও। তিনি এতে অসম্মতি প্রকাশ করে বললেন, আল্লাহ তায়ালার কসম, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রক্ত মুবারক আমি যমীনে পড়তে দেবোনা। তিনি রক্ত গিলে ফেললেন। তখন হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কেউ যদি এ মুহুর্তে কোনো জান্নাতী লোক দেখতে চায়, সে যেনো এই ব্যক্তিকে দেখে নেয়।
উক্ত ঘটনাগুলোতে আমরা দেখতে পাই যে, যারা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রস্রাব মুবারক ও রক্ত মুবারক পান করেছেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিন্তু তাদেরকে ভবিষ্যতে আর কখনো পান করতে নিষেধ করেননি বরং আনন্দিত হয়েছিলেন। এবং তিনি তাদেরকে আজীবন পীড়ামুক্ত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। আবার রক্ত পানকারীকে জান্নাতী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র প্রস্রাব মুবারক ও রক্ত মুবারক পাক এবং বরকতময়।
নবীজির দৈহিক শক্তিঃ
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৈহিক শক্তি এবং পেশীবলের দিক দিয়ে এতো শক্তিশালী এবং সুদৃঢ় ছিলেন যে, বিশ্বখ্যাত কোন কুস্তিগীরও তাঁর সামনে টিকতে পারতো না। এ প্রসঙ্গে দুই একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে।
হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “তিনি বলেন- আমরা যখন পরিখা খনন করছিলাম, সেখান থেকে খুব শক্ত একখানা পাথর বের হলো। সবাই নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এলেন। আবেদন জানালেন, একটি বড় ও কঠিন পাথর পাওয়া গেছে। তিনি বললেন, আচ্ছা আমি পরিখায় নামছি। তারপর তিনি দাঁড়ালেন। তখন তাঁর পেটে পাথর বাঁধা ছিলো। আমরাও তিন দিন ধরে কিছু পানাহার করিনি। তিনি একটি কোদাল নিয়ে পাথরটির উপর আঘাত করলেন। সাথে সাথে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল।” (সহীহ বুখারী)
নবীজির দৈহিক শক্তি এবং বীরত্বের ব্যাপারে আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। আরব ভূ-খন্ডে আবুল আসয়াদ জাহমী নামে এক নামকরা পালোয়ান ও কুস্তিগীর ছিলো। ওখানকার সকল বীর তাকে ভয় পেতো। তার শক্তি কেমন ছিলো তা একটি ঘটনা থেকে অনুমান করা যায়। সে একটি গরুর চামড়ার উপর দাঁড়িয়ে যেতো। অন্যসব বীরদের হুকুম দিতো, তার পায়ের নিচ থেকে চামড়াটি টেনে নিতে। দশজন পালোয়ান মিলে চামড়া টানতো। তাদের টানাটানিতে গরুর চামড়া ছিড়ে যেতো। এদিকে পালোয়ানদের হাতে ধরে থাকা চামড়া ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে তারা অনেক দূরে গিয়ে পড়তো। তবু আবুল আসয়াদের পায়ের নিচে চামড়ার যে অংশটি থাকতো, তা যথাযথই থেকে যেতো। তাকে তারা একটি দন্ডও নাড়াতে পারতো না।
সেই আবুল আসয়াদ জামহী নবী পাককে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললো, আমাকে যদি হারাতে পারেন, তাহলে আমি আপনার উপর ঈমান আনবো।
নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন। তার সাথে মোকাবেলা করার জন্য ময়দানে চলে এলেন। প্রথম বারেই তিনি তাকে মাটিতে লুটিয়ে দিলেন। সে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়েও তার দেওয়া ওয়াদায় বিশ্বাসঘাতকতা করলো। এবং ঈমানের পরম দৌলত থেকে মাহরুম থেকে গেল। (মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যা)
কত সুন্দর তুমি হে রাসুল
হয়নি দেখা এই দু চোখে,
দেখেছে যে চোখ তোমায়
যাবেনা সে চোখ দোযখে।