সূরা বাকারার ২য় নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
ذالك الكتاب لا ريب فيه.
এই আয়াতের তরজুমায় দেওবন্দের প্রধান মুফতি মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী লিখেন, " এই কিতাবে কোন সন্দেহ নেই।"
দেওবন্দের হাকিমুল উম্মত আশ্রাফ আলী থানবী সাহেব লিখেন, " এই কিতাব এমন, যাতে কোন সন্দেহ নেই।"
'লা রাইবা ফিহী'- আয়াতের 'ফিহী' অংশে দৃষ্টি ক্ষেপণ করলে 'ফি' অর্থ দাঁড়ায়
স্থান বা কাল। অথচ উপরের দু'টি অনুবাদের কোনটিতেই স্থান বা কালের উল্লেখ
নেই, অন্য কোন অনুবাদক এক্ষেত্রে সুক্ষদৃষ্টি দিতে পারেন নি। অনুবাদের এই
কমতি মিটিয়েই আলা হযরত অনুবাদ করেন, " সেই উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন কিতাব, কোন
সন্দেহের স্থান নয়।"
দৃষ্টিতে আরো ধরা দেয়, আয়াতে 'জালিকাল কিতাব'
অংশে 'জালিকা' আরবি ব্যাকরণ রীতিতে দূরের কোন কিছুকে নির্দেশ করতে প্রয়োগ
করা হয়। আলা হযরতের পূর্বে উল্লেখিত দু'জনের অনুবাদে 'এই কিতাব' বলে আয়াতের
ঐ দৌরাত্ম্য লোপ পেয়েছে, যা কোরআনে ছিলো। কিন্তু আলা হযরত 'সেই' ইশারায় ঐ
দূরবর্তী জিনিসকে আহ্বানের ব্যাকরণ যথাযথ প্রয়োগ করেছেন।
সূরা আল-ইমরানের ৫৪ নং আয়াতে এসেছে,
ومكرو ومكر الله.
আয়াতের
অনুবাদে মুফতি মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী লিখেছেন, " এবং প্রতারণা করলো ঐ
কাফিরেরা, আর আল্লাহও প্রতারণা করলেন। এবং আল্লাহর পাকড়াও সবচেয়ে ভালো।"
তরজমা শাব্দিক হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর শানে 'প্রতারণা'র মতো দোষ-ত্রুটি
সংযুক্ত করতে বিন্দুমাত্র সচেতনতা মস্তিষ্কে জাগে নি। শানে উলুহিয়তের
সিলেবাসে সতর্কতার সাথে এই আয়াতের তরজুমা আলা হযরত এভাবেই করেছেন, " এবং
কাফিররা প্রতারণা করেছে। আর আল্লাহ তাঁদেরকে ধ্বংস করার গোপন কৌশল অবলম্বন
করেছেন, এবং আল্লাহ সর্বাপেক্ষা উত্তম গোপন তদবিরকারী।"
সূরা তাওবাহ'র ১৬৭ নং আয়াতে এসেছে,
نسوا الله فنسيهم.
মুফতি মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী এই আয়াতের অনুবাদ এইভাবে করেন, " ভুলে গেলো আল্লাহকে। তাই তিনিও তাঁদেরকে ভুলে গেলেন।"
থানবী সাহেব লিখেন, " তারা খোদার খেয়াল করে নি, তাই খোদাও তাঁদের খেয়াল করেন নি।"
তরজমা আপন জায়গায় ঠিক আছে। তবেঁ অতটা প্রভাবান্বিত হয় নি, যতটা আলা হযরতের
তরজুমায় পাওয়া যায়, " তারা আল্লাহকে ছেড়ে বসেছে; সুতরাং আল্লাহও তাঁদেরকে
ছেড়ে দিয়েছেন।"
হযরত ইয়াকুব আলাহিস সালাম সম্পর্কে সন্তানদের মন্তব্য আল্লাহ পাক সূরা ইউসুফের ৯৫ নং আয়াতে উদ্ধৃতি দেন এভাবে,
قالوا تالله انك لفي ضلالك القديم.
সূরা তোয়াহা'র ১২১ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
عصى ادم ربه فغوى.
আয়াতের তরজুমায় দেওবন্দী আলেম আশেক ইলাহি মিরাঠী লিখেন, " আর আদম স্বীয় প্রভুর নাফরমানি করলেন। তৎক্ষণাৎ গোমরাহ হয়েছেন।"
নবীগণ নিষ্পাপ। যাঁদেরকে আল্লাহ পাক অতীত-ভবিষ্যতে গোনাহ থেকে মুক্ত রাখার
প্রতিশ্রুতি দেন। আল্লাহর নবীকে গোমরাহ বলে নবীর শানে অসম্মান প্রদর্শন
করা হয়েছে এই অনুবাদে। তাজিম শেখাতে আলা হযরত তরজমা করেছেন এইভাবে, " এবং
আদম থেকে স্বীয় প্রভুর নির্দেশ পালনে বিচ্যুতি সংঘটিত হলো; তখন যেই
উদ্দেশ্য চেয়েছিলো, সেটার পথ পায় নি।"
নবী যদি গোমরাহ হয়, তাহলে
পৃথিবীতে হেদায়েতপ্রাপ্ত আছেই বা কে! যারাই অনুবাদের ক্ষেত্রে আকীদার
ব্যাপারে অসতর্ক ছিলো, তাঁদের অনুবাদগুলো কাফের-মুশরিকদের আজীবনের খোরাক
জোগাবে। ওরা বলবে, দেখ! তোমাদের কোর'আনেই নবীকে গোমরাহ বলা হয়েছে!
(নাউজুবিল্লাহ!)
আসুন, তাফহীমুল কোরানের মতো ঐসকল বিকৃত তরজমাকে একসাথে
না বলি। আর প্রতিটি ঘরের বুকশেলফের উপরের তাকে আলা হযরতের অনুবাদ রাখি।
কানযুল ঈমান দিয়ে সাজিয়ে ঈমানকে মজবুত করি।
This page has 1123 hits