দেশের অন্যতম বৃহৎ ইসলামী ওয়েবসাইটে স্বাগতম 

আলা হযরতের কারামত


আ’লা হযরত ও বিধর্মী যাদুকরঃ
একদিন আ’লা হযরত মসজিদ থেকে বের হয়ে একটি জায়গায় অনেক লোকদের সমাগম দেখলেন। আ’লা হযরত ক্বেবলা জিজ্ঞাসা করলেন এখানে কি কারনে সমাবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তখন আ’লা হযরত ক্বেবলাকে বলা হল- এক বিধর্মী যাদুকর তাঁর যাদুর দক্ষতা দেখাচ্ছে। সে তিন/ চার কিলো পানিতে পরিপূর্ণ প্লেইট কাঁচা তাগায় উঠাচ্ছে। এসব শুনার পর আ’লা হযরত ক্বেবলা সেই স্থানে গেলেন এবং ঐ যাদুকরকে লক্ষ্য করে বললেন- লোকে বলেছে তুমি নাকি তিন/ চার কিলো পানি পরিপূর্ণ প্লেইট অপক্ষ সুতার মধ্যে উঠাও। লোকটি বলল জী হ্যা, আ’লা হযরত ক্বেবলা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন- অন্য কোন জিনিস কি উঠাতে পার? যাদুকরটি উত্তর দিল- আপনি যাই দিবেন আমি তাই উঠাতে পারব। তৎক্ষনাত আ’লা হযরত ক্বেবলা তাঁর একটি পায়ের জুতা ঐ যাদুকরের হাতে দিলেন। (আ’লা হযরত ক্বেবলা পাতলা নাগার জুতা পরতেন যার ওজন মাত্র ৫০ গ্রাম) এবং বললেন নাও দেখি এ জুতাটা উঠাওতো? এ জুতাতো ওঠাতেই পারবে না। ধর, তোমার জন্য জুতাটি এই জায়গায় রাখছি। তুমি এ স্থান হতে একটু সরিয়ে তুলে তোমার যাদুর দক্ষতা দেখাও। যাদুকর লোকটি ঐ জুতাটি অপক্ষ সুতায় তুলতে চেষ্টা করল। কিন্তু জুতাটি তোলা তো দূরের কথা, যেই জায়গায় জুতাটি রাখা হয়েছে সে জায়গা হতে একটু সরাতেও পারেনি। অতঃপর আ’লা হযরত ক্বেবলা বললেন- হে যাদুকর! এতক্ষন তুমি পরিপূর্ণ প্লেইটকে কাঁচা তাগায় ওঠিয়ে তোমার যাদুর নৈপুন্যতা দেখাচ্ছ। এখন আমার সামনে এ প্লেইটকে ওঠাও? যাদুকরটি তাও ওঠাতে অক্ষম হল। অতঃপর আ’লা হযরত ক্বেবলার কাছে যাদুকরটি নিজের মাথা নিচু করে ফেলল এবং আ’লা হযরত ক্বেবলার হাত মোবারক ধরে বাইয়াত গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে গেল। অতঃপর আ’লা হযরত ক্বেবলার দরবার থেকে আধ্যাত্মিকতার দৌলতে ওজমা গ্রহণ করে ঘরে চলে গেলেন।

ছেড়ে যাওয়া ট্রেন ফেরৎ আসলঃ
আ’লা হযরত ক্বেবলার খলিফা হযরত মাওলানা শাহ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মিরিঠি (র:) বর্ণনা করেন- আমি একবার বেরেলী শরীফ থেকে ফজরের নামাজের পর মিরিট যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম। আমি ফজরের নামাজ শেষ করে অনুমতির জন্য আ’লা হযরত ক্বেবলার কক্ষে গেলাম। আমার সালামের উত্তর দিয়ে তিনি বললেন, নাস্ত্মা করে যান। ইনশাআল্লাহ ট্রেন পেয়ে যাবেন। এ দিকে আমার চিন্ত্মা বেড়ে গেল এ কারণে যে, ট্রেন ছাড়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে, কিন্তু করার কিছুই নেই। কারন পীর, মুর্শিদের নির্দেশ তো মানতেই হবে। অতঃপর আমি নাস্ত্মা করতে বসলাম। কিছুক্ষন পর নাস্ত্মা আনা হল। নাস্ত্মা আনতে একটু দেরীই হল। নাস্ত্মা খেয়ে আমি ভাড়া করা গাড়িতে উঠে ষ্টেশনে পৌঁছলাম। যদিও ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার সময় পার হয়ে গিয়েছে। তবুও আমার মনে সান্ত্মনা ছিল যে, আ’লা হযরত ক্বেবলা যখন আমাকে ট্রেন পাব বলে আশ্বস্ত্ম করেছেন, তাহলে আমি ট্রেন পাবই। ভাড়ার গাড়ি থেকে মালামাল নামানোর পর সবাই বলতে লাগল। ট্রেন চলে গেছে প্রায় আধা ঘন্টা হয়ে গেছে। এত দেরী করলেন কেন? তিনি বললেন আমি কারো সাথে কথা না বলে সোজা ষ্টেশন মাষ্টারের কার্যালয়ে গিয়ে বসলাম; তাঁকে বললাম আ’লা হযরত ক্বেবলা আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, আমি ট্রেন পাব। যা আধা ঘন্টা আগে ষ্টেশন ছেড়ে চলে গিয়েছে। তাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমি ঐ ট্রেন পাব। আমি তাঁর সাথে এভাবে কথা বলছিলাম। হঠাৎ করে খবর এল যে, ট্রেনটির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ট্রেনটি পুনরায় বেরেলী শরীফ নিয়ে আসা হচ্ছে। আমি এ খবরটি পেয়ে খুব খুশি হলাম এ জন্য যে, আ’লা হযরত ক্বেবলার নূরানী জবানে এ কথা বলেছেন তা সত্য হয়েছে। ট্রেনটি পুনরায় ষ্টেশনে ফিরে আসল। ইঞ্জিন মেরামত করার পর আমি ট্রেনটিতে উঠে বসলাম এবং শান্তিপূর্ন ভাবে মিরিঠে পৌঁছলাম।

ফাঁসি থেকে আমজাদ আলীর মুক্তিঃ
১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের ঘটনা, হযরত আমজাদ আলী কাদেরী ভাইসুড়ি গ্রামে শিকার করতে গেলেন। তিনি শিকারের উপর গুলি নিক্ষেপ করলেন। গুলিটি লক্ষভ্রষ্ট হয়ে একজন পথচারীর শরীরে লেগে গেল। সাথে সাথে সেই পথচারীর মৃত্যু হল। তারপর আমজাদ আলী খান সাহেবকে গ্রেপ্তার করা হল এবং তার সম্পর্কে ইচ্ছাকৃত হত্যার মামলা দায়ের করা হলো। তাঁর ফাঁসির হুকুম হয়ে গেল। তাঁর কিছু আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব আ’লা হযরত ক্বেবলার দরবারে গেলেন। বলতে লাগলেন- হুজুর আমজাদ আলীর ফাঁসির হুকুম জারি করা হয়েছে। আপনি তাঁর জন্য দোয়া করুন। তখন আ’লা হযরত ক্বেবলা এরশাদ ফরমালেন- আপনারা সবাই যান, আমি ফাঁসি থেকে আমজাদ আলীকে মুক্ত করে দিলাম। ফাঁসির তারিখ শুনিয়ে দেওয়া হল। ফাঁসির তারিখের কিছু আগে তার পরিবার পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন কাঁদতে কাঁদতে সাক্ষাতের জন্য তাঁর কাছে এল। তাদেরকে দেখে আমজাদ আলী বলল। আপনারা সবাই ঘরে গিয়ে বিশ্রাম করুন। আমার ফাঁসি হবে না। ফাঁসির তারিখে আমি আমার ঘরে এসে পৌঁছাব। কারণ আমার পীর আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (র:) স্বপ্নে আমাকে বলেছেন আপনাকে আমি মুক্ত করে দিলাম। তাঁর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব তারা সবাই চলে গেল। ফাঁসির দিনে পুত্রের শেষ সাক্ষাত করার জন্য আমজাদ আলীর মা তার কাছে আসলেন এবং আমজাদ আলী বললেন মা শুধু শুধু কাঁদতেছেন কেন? ঘরে যান আমি ঘরে এসেই নাস্ত্মা করব। এরপর আমজাদ আলীকে ফাঁসির দড়ির সামনে হাজির করা হল। তাকে শেষ আশা ব্যক্ত করতে বললে; সে বলল: জিজ্ঞাসা করে কি লাভ? এখনো তো আমার মৃত্যুর সময় হয়নি। এ কথা শুনা মাত্র উপস্থিত সকলে হতবাক হয়ে গেল। সবাই মনে করল মৃত্যুর ভয়ে তার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাকে ফাঁসির রসি গলায় পরিয়ে দেয়া হল। সাথে সাথে খবর এসে গেল যে, রানী ভিক্টোরিয়ার ছেলের মুকুট পরিধানের খুশিতে কিছু হত্যাকারী ও কয়েদিকে ছেড়ে দেয়া হউক। এ খবর আসার সাথে সাথে তাঁকে ফাঁসির কাষ্টের থেকে নামিয়ে মুক্তি দেয়া হল। এদিকে সারা ঘরে শোকের ছায়া নেমে আসল। এমন সময় আমজাদ আলী এসে উপস্থিত হল। বলল- আমার জন্য নাস্ত্মা নিয়ে এস। আমি বলেছিলাম না, নাস্ত্মা ঘরে এসে করব। এখন তাই বাস্ত্মবে হল। আর এটায় হল আ’লা হযরত ক্বেবলার জিন্দা কারামত। আ’লা হযরত ক্বেবলা বলেছিলেন- আমি আপনাকে মুক্ত করে দিয়েছি। তাই আমজাদ আলী ফাঁসি থেকে মুক্তি পেয়েছে।

বৃষ্টি পড়া শুরু হলঃ
একবার একজন জোত্যিষি আ’লা হযরত ক্বেবলা (র:)-এর দরবারে হাজির হল। আ’লা হযরত ক্বেবলা (র:) ঐ জোত্যিষিকে বললেন- জোত্যিষি সাহেব বলুন তো আপনি হিসেব করে দেখুন বৃষ্টি কখন আসবে। সে গুণে বলল। এ মাসে পানি নেই। এ মাসে বৃষ্টি হবে না। বরং আগামী মাসে হবে। আ’লা হযরত ক্বেবলা (র:) তার হিসাব বুঝে বললেন, আল্লাহ তায়ালা চাইলে তার কুদরতে সব কিছু করতে পারেন। জোত্যিষি বললেন- না, এটা অসম্ভব। আপনি কেন তারকারাজির গণনার দিকে দেখছেন না? আ’লা হযরত ক্বেবলা বললেন- আপনি শুধু তারকা রাজির দিকে দেখছেন। আমিতো তারকারাজি দেখতেছি আর সাথে সাথে আল্লাহর কুদরতের দিকেও দেখছি। আ’লা হযরত ক্বেবলা এরশাদ ফরমালেন- আল্লাহ তায়ালা সর্বশক্তিমান। তিনি যেই জিনিষকে যেখানে ইচ্ছা সেখানে পৌঁছে দিতে পারেন। আপনি তো আগামী মাসে বৃষ্টি হওয়ার কথা বলেছেন। আল্লাহ চাইলে এ মাসে অথবা এ সপ্তাহে অথবা আজকেই এমনটি চাইলে এ মুহুর্তেই বৃষ্টি বর্ষন করতে পারেন। এ কথা বলার সাথে সাথেই মেঘে ছেয়ে গেছে এবং বৃষ্টি পড়া আরম্ভ হয়েছে। আ’লা হযরত ক্বেবলা এমন অলি ছিলেন যে তাঁর মুখ দিয়ে যা বের হত আল্লাহ তায়ালা তা সত্যে পরিণত করতেন।

হঠাৎ রেলগাড়িটি থেমে গেলঃ
এ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় মহাদেশ হল এশিয়া মহাদেশ। যার মান চিত্র প্রত্যক্ষ করলে বড় বড় দেশগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম। ভারতের একটি প্রদেশ হতে আরেকটি প্রদেশ যেতে সময় লাগে প্রায় এক ঘন্টা দেড়ঘন্টা মতো। আ’লা হযরত ক্বেবলার জন্য ট্রেন প্রস্তুত। টিকেটও অগ্রিম নেয়া হয়েছে। এখন যাত্রা করার পালা। ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার সময় মাগরিবের ওয়াক্ত হল। তখন আ’লা হযরত ক্বেবলা তাঁর ভক্তদের বললেন, চলো মাগরিবের নামাজটা পড়ে নিই। যখন আ’লা হযরত ক্বেবলা মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। তখন আ’লা হযরত ক্বেবলার কিছু শিষ্য বললেন, মাগরিবের নামাজ পড়তে গেলে তো ট্রেন চলে যাবে। তখন তাদের প্রতি উত্তরে আ’লা হযরত ক্বেবলা বললেন, ট্রেন গেলে চলে যাক। আগে মাগরিবের নামাজটা তো পড়ে নিতে হবে। ইনশাআল্লাহ আমাদেরকে ছাড়া ট্রেনটি যাবে না।
এদিকে ট্রেনটি ভেঁপু বাজিয়ে ষ্টেশন ছেড়ে চলে গেল। তাঁরা ফরজ নামাজ পড়ে সালাম ফিরাল এবং ট্রেন কতদূর চলে গিয়েছে তাঁর কোন পাত্তা ছিলনা। তাঁরা সুন্নাত ও নফল নামাজ পড়ে তাসবীহ পাঠে মনোনিবেশ করলেন। কিছুক্ষন পর রেলের দায়িত্বকৃত ম্যানেজার, অন্যান্য কর্মচারী ও চালক আ’লা হযরত ক্বেবলার দিকে আসছেন। তারা কাছে এলে আ’লা হযরত ক্বেবলার একজন ভক্ত বললেন- কি অবস্থা! আপনারা কি সমস্যা নিয়ে এসেছেন। তখন রেলের একজন কর্মকর্তা বললেন সামান্য আগে একটি রেল ষ্টেশন ত্যাগ করে গিয়েছে, সে ট্রেনটি ষ্টেশন হতে খুব কাছে সামনের একটি সেতুর মধ্যে গিয়ে আটকে গিয়েছে। এখন ট্রেনটি সামনেও চলে যাচ্ছে না, পিছনেও চলে আসছে না। রেলগাড়িটির ইঞ্জিন পরীক্ষা করে দেখা গেল ইঞ্জিনেরও কোন সমস্যা নেই। রেলের মধ্যে বসে লোকেরা বলাবলি করছে যে, ব্রেলী শরীফের এক বড় অলিয়ে কামেল ষ্টেশনে নামাজ পড়ছেন। তিনি ষ্টেশনে নামাজ পড়া অবস্থায় ট্রেন ষ্টেশন ছেড়েছে। হয়ত তার কোন ইশারায় ট্রেন থেমে গিয়েছে। কর্মচারী আ’লা হযরত ক্বেবলার পদদ্বয় মুবারক জড়িয়ে ধরে কাকুতি-মিনতি করতে লাগল- হুজুর আমরা আমাদের ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আ’লা হযরত ক্বেবলা কারামত প্রকাশ না হওয়ার জন্য একটি সুন্দর উপায় বের করলেন। তিনি বললেন আমি কেন ট্রেন থামিয়ে রাখব। কারো সামর্থ্য থাকলে দেখাও তো ট্রেন চালাতে। আমি ট্রেন থামায়নি। বরং আমি যার ইবাদত করছিলাম তিনিই একক আল্লাহ ট্রেনকে থামিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা কেঁদে আ’লা হযরত ক্বেবলার পা মোবারক জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল, হুজুর আমাদেরকে আপনি ক্ষমা করুন। অতঃপর আ’লা হযরত ক্বেবলা বললেন- আল্লাহ চাইলে ট্রেন চলবে। যান আপনারা ট্রেনটিকে পুনরায় এখানে নিয়ে আসুন। ট্রেনের চালক ও ম্যানেজাররা ট্রেনে গিয়ে ট্রেনটিকে সামনে চালাতে চেষ্টা করলেন কিন্তু ট্রেনটি সামনে চলেনি। যখন পেছনের দিকে চালানো হল তখন ট্রেনটি পিছনে চলতে শুরু করল। তাই তারা ট্রেনটিকে ষ্টেশনে ফেরৎ নিয়ে আসল। যখন আ’লা হযরত ও তার শিষ্যরা ট্রেনটিতে বসলেন, তখন ট্রেনটি পেলীবেত ত্যাগ করল এবং সামনে যেতে আর কোন বাধাঁই রইল না।






নির্বাচিত বিষয়সমুহ
সর্বাধিক পঠিত প্রবন্ধসমুহ
গুরুত্বপূর্ণ পেইজগুলো

This page has 218 hits