দেশের অন্যতম বৃহৎ ইসলামী ওয়েবসাইটে স্বাগতম 


তারাবীহ আট রাকআত নয়, বিশ রাকআত


তারাবীহ বিশ রাকআতের ব্যাপারেই গোটা মুসলিম জাতির ঐক্যমত্য রয়েছে। মক্কা মদিনা সহ সারা পৃথিবীতে বিশ রাকআত তারাবীহ হয়। তবে একটি স¤প্রদায় আট রাকআত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, যদিও তাদের পক্ষে স্পষ্ট কোন দলিল নেই। তারা বুখারী শরীফের যে হাদিসকে দলিল হিসেবে পেশ করে তা নিম্নরুপঃ
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهُ أَخْبَرَهُ , أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا كَيْفَ كَانَتْ صَلَاةُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَمَضَانَ ؟ فَقَالَتْ : مَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلَا فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً ، يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلَا تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ، ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلَا تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ، ثُمَّ يُصَلِّي ثَلَاثًا ، قَالَتْ عَائِشَةُ : فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ ؟ فَقَالَ : يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ وَلَا يَنَامُ قَلْبِي
অর্থাৎ- “হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে জানতে চান নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায কেমন ‎হতো রামাযান মাসে? তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামযান ও রামযান ছাড়া ১১ রাকআত থেকে বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকআত ‎পড়তেন, তুমি এর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে জানতে চেয়ো না। তারপর পড়তেন ৪ রাকআত, তুমি এর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে ‎জানতে চেয়ো না, তারপর পড়তেন ৩ রাকআত। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তখন আমি বললাম- হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি ‎বিতর পড়ার পূর্বে ঘুমিয়ে যাবেন? তিনি বললেন- হে আয়েশা! নিশ্চয়ই আমার দু’চোখ ঘুমায় আমার ক্বলব ঘুমায়না।”


এই হাদিস দিয়ে তারাবীহ নামাজ আট রাকআত প্রমাণের চেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা এই হাদিসে এমন নামাজের কথা বলা হয়েছে, যে নামাজ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা বছর পড়েছেন। এই হাদিসটিকে একটু বিশ্লেষণ করা যাক।
১। ৮+৩=১১ রাকআত যদি তারাবীহ ও বিতর ধরে নেই। তাহলে বুঝা যাচ্ছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানেও তারাবীহ পড়েছেন এবং রমজান ছাড়াও তারাবীহ পড়েছেন। অথচ, রমজান ছাড়া তারাবীহ নেই।
২। আর যদি এই ১১ রাকআত দিয়ে রমজানে তারাবীহ এবং রমজানের বাইরে তাহাজ্জুদ ধরে নেই। তাহলে বুঝা যাচ্ছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে কখনো তাহাজ্জুদ পড়তেন না, যেটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় কারণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপরে তাহাজ্জুদ পড়া অত্যাবশ্যকীয় ছিলো।
৩। যারা এই হাদিস দিয়ে তারাবীহর নামাজ আট রাকআত প্রমাণ করতে চায়, তারা বিতর নামাজ ১ রাকআতের পক্ষে। অথচ এই হাদিস দিয়ে যখন তারাবীহর নামাজের দলিল দেয় তখন বিতর ৩ রাকাত হিসাব করে। কি আশ্চর্য্য স্ববিরোধিতা!
এই হাদিসের সর্বশেষ যে উক্তি, “হে আয়িশা! আমার দু’চোখ ঘুমায় বটে কিন্তু আমার কালব ঘুমায় না।” এর দ্বারা বুঝা যায় নবীজি আমাদের কারো মতো নন। অথচ আমরা কীভাবে বলি তিনি আমাদের মতো সাধারণ মানুষ? বস্তুতঃ তিনি তো এমন এক স্বত্ত¡া, আল্লাহর সৃষ্টি জগতের মধ্যে যিনি এক ও অদ্বিতীয়, যার কোন শরীক নেই।


তারাবীহ নামাজ বিশ রাকআত তা বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো-
عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي فِي رَمَضَانَ عِشْرِينَ رَكْعَةً وَالْوِتْرَ
অর্থাৎ- “হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে বিশ রাকআত নামাজ পড়তেন অতঃপর বিতর পড়তেন।”  
অপর এক হাদিসে এসেছে-
عَنِ الْحَسَنِ اَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ جَمَعَ النَّاسَ عَلىَ اُبَيِ بْنِ كَعْبٍ فَكَانَ يُصَلِّي لَهُمْ عِشْرِيْنَ رَكْعَةً
অর্থাৎ- “হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু উবাই ইবনে কা’বের পিছনে লোকদেরকে জামাআতবদ্ধ করলেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে বিশ রাকআত নামাজ আদায় করলেন।”   
আরেক হাদিসে এসেছে-
عَنْ يَزِيْدِ بْنِ رُوْمَانَ قَالَ كَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ فِي زَمَانِ عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ فِي رَمَضَانَ بِثَلاثٍ وَعِشرِينَ رَكعةً قَالَ الْبَيْهَقِي وَثَلاَثَ هُوَ الْوِتْرِ
অর্থাৎ- “উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনকালে লোকেরা রমজানে ২৩ রাকআত নামাজ আদায় করতেন। ইমাম বায়হাকীর মতে ২৩ রাকআতের মধ্যে ৩ রাকআত হলো বিতর নামাজ।”  
উপরোক্ত হাদিসগুলো দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ নামাজ ২০ রাকআত। এভাবেই তা ১৪০০ বছর ধরে চলে এসেছে এবং এখনও মক্কা মাদিনাহ সহ সর্বত্র ২০ রাকআতই চলছে। অতএব, ৮ রাকআত বলে অপপ্রচারকারীরা বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী।



নির্বাচিত বিষয়সমুহ
সর্বাধিক পঠিত প্রবন্ধসমুহ
গুরুত্বপূর্ণ পেইজগুলো

This page has 366 hits